হাজারও সন্তানের বাবা, যিনি নিজেই জানেন না সন্তানের সংখ্যা কত!

স্টার নিউজ:
নিজেকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন শত শত সন্তানের জন্ম দেয়া একজন ডাচ শুক্রাণুদাতা। জোনাথন জ্যাকব মায়ার-এর শুক্রাণু ব্যবহার করে সন্তান ধারণ করা নারীদের নিয়ে তৈরি করা তথ্যচিত্রটি গত তেসরা জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। মায়ার কত সন্তানের বাবা তা জানার পর ‘ধোঁকা, খারাপ এবং রাগ’ বোধ করেছেন বলে জানান তাদের মধ্যে একজন নারী। তবে মায়ার বিবিসিকে বলেন যে তথ্যচিত্রটি প্রতারণামূলক। কারণ এর মাধ্যমে যেসব পরিবার তার প্রতি কৃতজ্ঞ তাদের চেয়ে অসুখী মানুষগুলোকেই বেশি প্রধান্য দেয়া হয়েছে। তবে তথ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক বলেছেন, বেশিরভাগ পরিবারের খুশি থাকার দাবিটি ‘সম্পূর্ণ অসত্য’। সাক্ষাৎকারে, মায়ার এটাও বলেছিলেন যে শত শত সন্তানের পিতা হওয়ার বিষয়টিকে তিনি ‘একদমই কোনো ভুল হিসেবে’ দেখেন না। ৪৩ বছর বয়সী মায়ার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া তথ্যচিত্রটির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানালে বুধবার বিবিসি রেডিও ফোর-এ ওইমেনস আওয়ার প্রোগ্রামে কথা বলেন।“তারা ইচ্ছাকৃতভাবে [তথ্যচিত্রটির] নাম দ্য ম্যান উইথ ১০০০ কিডস রেখেছে। অথচ এর নাম হওয়া উচিৎ ছিল – ‘যে শুক্রাণুদাতা পরিবারগুলোকে ৫৫০টি সন্তানের গর্ভধারণে সাহায্য করেছেন’, বলেন মি. মায়ার।“তার মানে শুরু থেকেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারিত এবং বিভ্রান্ত করছে”। মি. মায়ার আরো বলেন, তিনি আড়াইশো পরিবারকে ‘শুক্রাণু দিয়ে সাহায্য’ করলেও নেটফ্লিক্স পাঁচটি অসন্তুষ্ট পরিবারকে বেছে নিয়েছে। এই পাঁচটি পরিবারের বাইরে অন্যান্য পরিবারগুলোর বক্তব্য নিশ্চয়ই ভিন্ন রকমের হবে বলে তিনি মনে করেন। নেটফ্লিক্স ওমেন’স আওয়ারকে বলেছে যে এটি মায়ারের সাক্ষাৎকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে তথ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক নাটালি হিল প্রোগ্রামটির সাথে কথা বলেছেন।“আমি গত চার বছর ধরে জোনাথনের মিথ্যার কারণে প্রভাবিত হওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪৫ বা ৫০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি,” বলেন তিনি।
“তার মিথ্যার বিষয়ে ৫০টি পরিবার আদালতে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে এবং বিচারকের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি থামেন। তাই জোনাথনের গুটিকয়েকের সঙ্গে আলাপ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য”। মায়ার ১৭ বছর ধরে শুক্রাণু দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শুক্রাণু দিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো ক্লিনিকের মাধ্যমে না দিয়ে সরাসরি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। মায়ারকে তাদের শুক্রাণুদাতা হিসেবে বেছে নেয়া কয়েকজন নারী বলেন যে তিনি কত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে স্পষ্ট করেননি মায়ার।“আমি দ্বিধাগ্রস্ত, কারণ সে আমাকে তখন বলেছিল যে সে পাঁচটি পরিবারকে শুক্রাণু দিচ্ছে”, নাটালি নামের একজন মা ওইমেসন আওয়ারকে জানান।“২০২১ সালে আমি একটি সংবাদপত্রে পড়লাম যে এমন পরিবারের সংখ্যা আসলে শত শত ছিল। আর তাই আমি দ্বিধাগ্রস্ত এবং তার পদ্ধতির সাথে একমত নই”। শুক্রাণু নেয়া কিছু নারী তাকে “একজন নার্সিসিস্ট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর অন্যরা পরামর্শ দিয়েছেন যে তিনি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাড়ে পাঁচশো সন্তানের জন্ম দেয়ার সংখ্যাটিকে তিনি অনেক বেশি মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মায়ার বলেন, “একজন সাধারণ মানুষের জন্য [বেশি], তবে একজন শুক্রাণু দাতার জন্য না”।
“একজন শুক্রাণু দাতার জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক। তারা শত শত শিশুর মধ্যে যায়। তারা [ক্লিনিকগুলো] দাতার শুক্রাণু বিভিন্ন দেশে পাঠাবে”।-বিবিসি