জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা সাবেক আইএস-বধূ শামীমা বেগমের

স্টার নিউজ ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাবেক বধূ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর পর বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রিটেনে ফিরে আসার সুযোগ পেতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ছয় বছর আগে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া শামীমা।
২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে যান স্কুলশিক্ষার্থী শামীমা বেগম। বর্তমানে এই আইএস-বধূর বয়স ২২ বছর।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তিনি যুক্তরাজ্যকে ঘৃণা করতেন না। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো মোকাবিলায় আদালতে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যেকোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার এবং অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তিনি কীভাবে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সেসব নিয়ে আগেও কথা বলেছিলেন শামীমা বেগম।


স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার বিরুদ্ধে আনা আইএসের হয়ে চালানো নৃশংসতার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে বলেছেন, এসব একেবারে মিথ্যা।
ব্রিটেনের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার ‘আশা এবং স্বপ্ন’ দেখেন শামীমা বেগম। তবে নাগরিকত্ব যদি পুনর্বহাল করা না হয়, সেক্ষেত্রে অন্য কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে এখনও ভাবছেন না বলেও জানিয়েছেন। স্কাই নিউজকে শামীমা বলেছেন, ‘আমি এসবের বিরুদ্ধে আদালতে লড়তে ইচ্ছুক। কিন্তু আমাকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেছেন, ‘‘একজন কিশোরী হিসেবে যুক্তরাজ্য ছাড়ার সিদ্ধান্তটি দ্রুত নেওয়া হয়নি। বরং এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে তিনি ‘কিছুক্ষণের জন্য ভেবেছিলেন।’’ শামীমা বেগম বলেন, ‘আমি ব্রিটেনকে ঘৃণা করিনি। আমি আসলে আমার জীবনকেই ঘৃণা করছি।’
‘আমি খুব সংকুচিত বোধ করছি এবং আমার মনে হয়েছে, আমি একজন ব্রিটিশ নারী হিসাবে যুক্তরাজ্যে যে জীবন চেয়েছিলাম; তা নিয়ে আমি বাঁচতে পারব না।’
‘মনে হচ্ছে এখানে আসাটাই আমার একমাত্র অপরাধ। আর এই অপরাধে আমি কারাগারে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি কেবলমাত্র সেসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই।’
বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আল-রোজ শরণার্থী শিবিরে আছেন শামীমা বেগম। বসবাসের জন্য এই শিবির এখন অত্যন্ত ভীতিকর হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আইএসের এই বধূ বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে কিছু কারণে এখানে বসবাস করা আরও ভীতিকর হয়ে উঠেছে। নারীরা অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, সঠিক সময়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে চান। আমি মনে করি না, তারা আমাকে ব্যর্থ করবে; যেভাবে আমি তাদের ব্যর্থ করেছি।
এর আগে, বেগম বলেছিলেন, সিরিয়ায় আইএস ভূখণ্ডে পৌঁছানোর মাত্র ১০ দিন পর তিনি নেদারল্যান্ডসের ধর্মান্তরিত ইয়াগো রিদিককে বিয়ে করেছিলেন। শিবিরে তার তিন সন্তান জন্ম নিলেও তাদের কেউই বেঁচে নেই।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণী বলেছেন, ‘ঘুমাতে গেলেই তার মনে হয়— আমার সন্তান মারা যাচ্ছে, বোমা হামলা চলছে, মানুষ অনবরত দৌড়াচ্ছে এবং আমার বন্ধুরা মারা যাচ্ছে।’

সূত্র: স্কাই নিউজ, ডেইলি মেইল।