
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়েছেন নাকি দেশেই আছেন সেটি নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ বলছেন না। গণমাধ্যমে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক এই পুলিশ কর্তা।সাথে দেশ ছেড়েছেন তার তিন মেয়ে ও স্ত্রী। সর্বশেষ মঙ্গলবার একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে তুরস্কে নিজের বাড়িতে আছেন সাবেক এই পুলিশ মহাপরিদর্শক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা তিনি নিজেও শুনেছেন। তবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেন না তিনি। দুদকের আইনজীবী বুধবার সুপ্রীম কোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যম যেভাবে প্রেডিক্ট করছে উনি তুরস্কে, আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক সেটি প্রেডিক্ট করতে পারে না। কারণ আগাম প্রেডিক্ট করার সুযোগ আইন দুদককে দেয়নি। স্টার নিউজের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকে নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক এবং বেশ কিছু সম্পত্তি জব্দও করা হয়েছে। তিনি আসলেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কি না, গেলে কোথায় গিয়েছেন, সেই বিষয়ে বা তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ খোলাসা করে কিছু বলছেন না। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিশাল বিত্ত-বৈভব নিয়ে গত ৩১শে মার্চ প্রথম প্রকাশ করে দেশের একটি সংবাদপত্র। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সম্পদ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়।
যেসব খবরে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এসব অভিযোগর প্রেক্ষিতে তথ্য যাচাই বাছাই করে গত ১৮ই এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এর দু’দিন পরে গত ২০ এপ্রিল ভিডিও বার্তায় বেনজীর আহমেদ দাবি করেন তিনি ও তার পরিবারের নামে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা মিথ্যা ও অসত্য।
গত ২৩শে মে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দেন আদালত। এরপর সাবেক পুলিশ প্রধান ও তার পরিবারের অঢেল সম্পত্তি অর্জনের নানা খবর আসতে থাকে দেশের গণমাধ্যমে। অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলাকালে তিনি দেশ ছাড়তে পারেন কি না এমন প্রশ্ন সামনে আসার পর বুধবার এ নিয়ে জবাবও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, “আদালত থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি যে সে বিদেশে যেতে পারবে না। কারো ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা না থাকে তাহলে তো দেশ ছাড়তে বাধা থাকার কথা না”। তাহলে কারো বিরুদ্ধে তদন্ত বা অনুসন্ধান চলাকালে দেশের বাইরে যাওয়ার আইনি প্রক্রিয়া কী? সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা স্টার নিউজকে বলেন, “অনুসন্ধানে দুদক কি পেয়েছে বা কী পায়নি সেটা এখনো নিশ্চিত না। এই অভিযোগের একটা প্রাইমারি গ্রাউন্ড যদি না থাকে তাহলে তো মুভমেন্ট বন্ধ করতে বাধা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক”। যদিও দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা-টিআইবি তার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের সাথে আঁতাতের অংশ কি না সেই প্রশ্ন তুলেছে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর পর দুদকের কাছে একের পর এক তার সম্পত্তির নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬জুন বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদকে এবং ৯ জুন তার স্ত্রী জীশান মির্জাসহ সন্তানদের দুদক তলব করেছে। একই সাথে বেনজীর আহমেদের দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদের বিষয়টি নিয়েও অনুসন্ধান করছে। দুদক বলছে, অনুসন্ধান কার্যক্রমের প্রক্রিয়া হিসেবে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে ডাকা হয়েছে। বুধবার দুদকের আইনজীবী মি. খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে অফিসিয়াল কোনো রেকর্ড নাই যে উনি বিদেশ চলে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে সুযোগ দিয়েছে। আমরা মনে করি উনি সুযোগটা গ্রহণ করবেন। তিনি যেখানেই থাকুক দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন”।
বেনজীর আহমেদর একের পর এক সম্পত্তির খোঁজ মিললেও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না সেটি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী মি. খান বলেন, “এখনো অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে মামলা করা যায় না। আমরা যে তথ্য উপাত্তগুলো পেয়েছি সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আরো সম্পদ মিললে সেগুলোও জব্দ করা হবে”।
বেনজীর আহমেদ যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনে তার নানা বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার পর বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিও রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। বিরোধী দল বিএনপি বলছে, বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ তিনি ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ও পদে থেকেই এই দুর্নীতি করেছেন।বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দায় সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।