চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মুখোমুখী অবস্থান

স্টার নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি এবং মুখোমুখী অবস্থান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সীমান্ত উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীমান্তে বিএসএফের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে একই সীমান্তে উত্তেজিত জনতার বিপুল উপস্থিতি এবং আক্রমণাত্মক অবস্থান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ও আতঙ্ক রয়েছে। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও যেকোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি।২০২৫ সালের শুরু থেকেই সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় বিএসএফ এর কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ইস্যু হচ্ছে। সীমান্ত নিয়ে উদ্বেগের কারণ ১৮ই জানুয়ারি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে উভয় দেশের কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নেয়। বিজিবির হিসেবে বাংলাদেশ অংশে ১০-১৫ হাজার মানুষ সীমান্তে উপস্থিত হয় সেদিন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উত্তেজিত জনতা ছত্রভঙ্গ করতে বিএসএফ এর কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়তে হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় বিএসএফ। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-মালদহ সীমান্তে দুই দেশের জনগণের মধ্যে এরকম অবস্থান ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা বলছেন, প্রয়োজন হলে আবার তারা সীমান্তে যাবেন এবং লড়তে প্রস্তুত আছেন। ঘটনার পর দুই দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়েছে সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি এবং বিএসএফ। দুই সীমান্তে নজরদারি এবং টহল বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দফায় দফায় গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড। দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে পতাকা বৈঠকও হয়েছে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এরকম জনবিক্ষোভের নজির খুব একটা নেই। দুই দেশের নাগরিকদের সীমান্তে জড়ো হওয়ার বিষয়টি চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির। দুই দেশের জনগণের এরকম মুখোমুখী অবস্থান নানাদিক থেকেই বিপদজনক বলে অভিহিত করেন মি. কবির।”এটা বিপদজনক এই কারণে যে সীমান্তে দুই দেশের মানুষ যখন মুখোমুখী দাঁড়ায় যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারণ একটা মানুষ মারা গেলে এটা একটা বিরাট রকমের দুই দিকে উত্তেজনা বাড়াবে।
আর যেহেতু দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও সেখানে আছে, তারাও কিন্তু এতে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা এখানে থাকে।”৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নতুন ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির। তার মূল্যায়নে, “আগে যেটা সরকারি পর্যায়ে কূটনীতিকরা আলাপ আলোচনা করতেন এখন জনগণ এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে দুই দিকেই। তার কারণ হলো গত সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কারণে মানুষের মধ্যে যে বিরাগ, রাগ এটা সঞ্চিত। বাংলাদেশের মানুষের রাগ ক্ষোভটা বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
এবং দুই দেশের সম্পর্কটা সরকারি পর্যায় থেকে নিচের দিকে নেমে জনগণ পর্যায়ে বিস্তৃত হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে যেগুলো হচ্ছে সেটা কিন্তু দুই দেশের মানুষের এই সক্রিয়তার একটা বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমি দেখি।”ভারতে কাজ করা সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বিবিসিকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্কের অবনতি সেটি থেকে উত্তরণ দরকার।”বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ন্যারেটিভটা প্রচার করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ ইজ অ্যা ব্যাড প্লেস, এটা উগ্রবাদী জায়গায় চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর আমাদের বন্ধু নাই–– এই ন্যারেটিভটা থেকে ভারতের বেরিয়ে আসা দরকার, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ভারতের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।”