ভারতের মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ অপতথ্য ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে-শফিকুল আলম

স্টার নিউজ ডেস্ক:
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন ভারতের মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ অপতথ্য ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। মানুষ এখন ভিডিও দেখেন বেশি, নিউজ পড়েন কম। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
তিনি বলেন, একটা ছেলেকে জবাই করছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, ল্যাটিন আমেরিকায় ড্রাগ নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এগুলো মানুষতো বিশ্বাস করছে। প্রতিনিয়ত অপতথ্য, মিস ও ডিজ ইনফরমেশন আসছে। এর মাধ্যমে সমাজের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত লাগানো হচ্ছে। সামনে নির্বাচন। আমাদের গণমাধ্যমকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হবে। এটি শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়। প্রত্যেকটি পত্রিকার ফ্যাক্ট চেকিং সেল থাকা দরকার। এটি পোস্ট রেভ্যুলেশনারি চ্যালেঞ্জ।’গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সাংবাদিকদের ভূমিকা মূল্যায়ন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হবে বিশেষজ্ঞ একটি প্যানেল করে গত ১৫ বছরের তিনটি নির্বাচন, আইসিটির রায়ে ফাঁসি, মাওলানা সাঈদীর মামলার রায়ের পর সারাদেশে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণহানি, শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডিসহ সব বড় বড় ঘটনাগুলোতে কেমন সাংবাদিকতা হয়েছে, সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন ছিল, তা অনুসন্ধান করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে।’চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতিসংঘ জুলাই গণহত্যা নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা–মন্ত্রী কে কোথায়, কী ভূমিকা রেখেছিলো, সেগুলো উল্লেখ করা আছে। এরকম একটি প্রতিবেদন যেন গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা নিয়ে করা হয়, সে বিষয় জাতিসংঘের সহায়তার জন্য লিখব। দেখি তারা কী বলে।’
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের মানুষ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এখন মানুষ মন খুলে লিখছে, সমালোচনা করছে, গালিও দিচ্ছে। কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না। অনেকে আবার বলছে, স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতি সফট হচ্ছি। কিন্তু আমরাতো আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। আমরা কোনো কলম ভেঙে দেইনি, কোনো প্রেসে তালা দেইনি। কোনো গণমাধ্যম যদি, তার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে, আপনারা সেই গণমাধ্যম অফিসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করুন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, আপনারা লিখুন, মন খুলে লিখুন। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বিগত দিনে সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে। আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল কিছু মানুষকে নিরাপত্তা দিতে। বিগত সরকার সাংবাদিকদের হাত–পা বাঁধতে এই আইন ব্যবহার করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার মুক্ত সাংবাদিকতায় বদ্ধপরিকর, এই আইন বাতিল হবে।
বিএফইউজে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্রকাঠামোয় যে পরিবর্তন হয়েছে তার সঙ্গে অনেকেই এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। যে কোনো বিপ্লবের পর পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে কমপক্ষে ২০ বছর সময় নেয়। কিন্তু আমাদের এখানে ফ্যাসিবাদ পতনের বছর না গড়াতেই তাদের সহযোগী শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। চট্টগ্রামে মিছিল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় না হলেও নীরবতায় তারা এই সাহস পেয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারত থেকে যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন সংবাদ সম্মেলনে যা ঘটেছিল তা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম দালালী। এরচেয়ে নিকৃষ্টতম দলদাশগিরি আর হতে পারে না। প্রশ্ন করার কথা ছিল যেসব চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে। কিন্তু আমরা দেখলাম বলা হচ্ছে হাসিনা আন্তর্জাতিক নেত্রী। তার নোবেল পাওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যাতে গণমাধ্যমকে এমন নিচুস্তরে নামাতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সিএমইউজে সেক্রেটারি সালেহ নোমান ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি ও পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব রিজাউর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য নীলা আফরোজ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিজোয়ান সিদ্দিকী, চৌধুরী সিয়াম এলাহী প্রমুখ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া, আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি হাসান আলী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম প্রমুখ।