
স্টার নিউজ ডেস্ক:
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোকাহত পরিবার-পরিজন ও শুভ্যানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সংযম ও দায়িত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারতেন। তারেক রহমান তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বলেন, ‘আমি তাঁর (ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক) রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও শুভ্যানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক গতকাল রোববার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হল। তিনি ছিলেন এদেশের একজন বরেণ্য আইনজীবী। আইনের অঙ্গনে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী মরহুম আব্দুর রাজ্জাক সর্বমহলে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। তাঁর বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে খুবই কার্যকর হতো।’ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর অসুস্থ হয়ে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার প্রথম জানাজা পারিবারিক বাদ এশা ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের প্রথম নামাজে রোববার বাদ এশা রাত সাড়ে ৮টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের ছোট ছেলে ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী। জানাজার নামাজে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বেলা ১১টায় তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা মরহুমের বড় সন্তান ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকীর ইমামতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা এ টি এম মাসুমের ইমামতিতে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের প্রথম নামাজে জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আমিররাসহ অন্য কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতারা উপস্থিতি ছিলেন।মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ এবং শোক সন্তোপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় ফেরেন। ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ান। ফলে আওয়ামী লীগ শাসনামলে রোষানলে পড়তে হয় তাকে। একপর্যায়ে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
গত ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচরণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।’
তার জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালে। তার স্থায়ী বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখ লাল গ্রামে। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র এডভোকেট হন। তিনি আইন পেশায় দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেন
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার মৃত্যুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ আইন অঙ্গনে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। অত্যন্ত বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হিসেবে তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন।
