বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং আর নেই।

স্টার নিউজ ডেস্ক:
চলে গেলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং। গেলো শুক্রবার অস্ত্রোপচারজনিত সমস্যা নিয়ে রোমানিয়ায় মারা যান বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিকতার এই পুরধা ব্যক্তিত্ব।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর সায়মন ড্রিং তার লেখনীতে তা বিশ্বকে জানিয়েছেন। দেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সায়মন ড্রিংয়ের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

‘ট্যাংক ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বের সামনে উন্মেচিত হয় বাংলাদেশীদের ওপর ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে কি অবর্ণনীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদাররা। প্রতিবেদনটির মুল কারিগর যুক্তরাজ্যের নাগরিক সায়মন ড্রিং ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফের হয়ে যুদ্ধের সংবাদ কাভার করছিলেন ভিয়েতনামে। অফিসের নির্দেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির খবর সংগ্রহে একই বছরের ৬ মার্চ ঢাকায় আসেন তিনি। ২৫ মার্চ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকা ছাড়েন তার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত ৫০ বিদেশী সাংবাদিককে বলা হয় দেশ ছাড়তে। সামরিক জান্তাদের নির্দেশ না মেনে সংবাদ সংগ্রহে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হোটেলে লুকিয়ে থাকেন সাংবাদকর্মি সাইমন ড্রিং ও এপির ফটোগ্রাফার মিশেল লরেন্ট। ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞের ঠিক দুইদিন পর টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গনহত্যার খবর প্রকাশের পর বিশ্ববাসী জানতে পারে কতোটা নির্মমতার শিকার তখনতার পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। একাত্তরেই যুক্তরাজ্য থেকে কোলকাতায় ফিরে বাংলাদেশের যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেন সায়মন ড্রিং। পাক বাহিনীর আত্নসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতায় স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য । ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইমন ড্রিংএর হাত ধরেই বিকশিত হয় বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতা। ২০০২ সালের অক্টোবরে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে সাইমন ড্রিংকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে বিএনপি সরকার। ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া সায়মন ড্রিং’র সাংবাদিকতার শুরু ১৮ বছর বয়স থেকে। প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন পৃথিবীর ২২ টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সাইমন ড্রিং অস্ত্রপচার জনিত সমস্যায় ১৬ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রোমানিয়ায়। বাংলাদেশের সংবাদকর্মিদের পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।