বাগরাম বিমানঘাঁটি দখলের ফন্দি আঁটছে চীন : যুক্তরাষ্ট্র

স্টার নিউজ ডেস্ক:
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছর মেয়াদী ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ যে বিমানবন্দরটি প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল মার্কিন ও ন্যাটো সেনাবাহিনী, সেই বাগরাম বিমানবন্দর দখলের ফন্দি আঁটছে চীন। তাছাড়া পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারতকে চাপে রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে দেশটির।
ভারতের বৃহত্তম বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন কূটনীতিক নিকি হ্যালি এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের সাবেক এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের কারণে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অস্থির। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে তা আরও ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
দেশটির টালমাটাল এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চীন বাগরাম বিমানঘাঁটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, ‘চীনের ওপর আমাদের নজর রাখা উচিত। কারণ দেশটির গতিবিধি বলছে, তারা বাগরাম বিমানঘাঁটি দখলের ফন্দি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তাছাড়া আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে চীন পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে।’
‘এর মাধ্যমে তার দু’টি উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়— প্রথমত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যেসব সাংস্কৃতিক ঐক্য রয়েছে; সেটিকে কাজে লাগানো এবং পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারতকে চাপে রাখা।’
২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান শুরুর সময় প্রথম পর্যায়েই বাগরাম বিমানবন্দর দখল করেছিল মার্কিন ও ন্যাটো সেনাবাহিনী। তারপর ২০ বছর, ২০২১ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত এই বিমানবন্দর বা ঘাঁটিকে সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করেছেন মার্কিন ও ন্যাটো সেনা সদস্যরা।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি বছর এপ্রিলে আফগান যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ও ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত জুলাইয়ে সেই বিমানবন্দর ত্যাগ করে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য দল।
এদিকে, অনেকটা আকস্মিকভাবে আফগানিস্তান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা এবং তাড়াহুড়ো করে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের কারণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর আস্থা হ্রাস পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিকি হ্যালি। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অনেকগুলো নতুন চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা এসে দাঁড়িয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে নিকি হ্যালি বলেন, ‘বর্তমানে তার (বাইডেন) সামনে সবচেয়ে বড় যে কাজটি রয়েছে, সেটি হলো মিত্র দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট ও মজবুত করা, আমাদের সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করা এবং সাইবার অপরাধ ও সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করা।’
‘মিত্র দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এখন সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কাজটি যতদ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত। তাইওয়ান, ইউক্রেন, ইসরায়েল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান— সবাইকে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন যে আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি এবং নিজেদের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে আমরা সবসময় তাদের পাশে চাই।’
‘দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত— তা হলো বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইকে শক্তিশালী করা। কারণ আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতাগ্রহণ বিশ্বজুড়ে জিহাদিদের উৎসাহিত করবে এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোতে কর্মীসংখ্যার একটি উল্লম্ফন খুব শিগগিরই দেখা যেতে পারে।’
সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন নিকি হ্যালি।
‘তার প্রশাসন যে অন্তঃসারশূন্য সেটি এই প্রথমবার বোঝা গেল এই আফগানিস্তান ইস্যুতে। আমি বলতে চাচ্ছি, তিনি মার্কিন সেনাবাহিনী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং আমার মতো অনেক মার্কিন নাগরিক, যারা দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে গর্ববোধ করেন, তাদের সবার আস্থা ও আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন।’
‘তিনি ভরসা হারিয়েছেন আমাদের মিত্র দেশগুলোরও, যারা এখন আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করেই তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে এবং বুঝতে পারছে না আমরা যা করলাম, তা কেন করলাম।’

সূত্র : পিটিআই।