
স্টার নিউজ ডেস্ক:
গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের ১২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। রায়ে তার দুই শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। কারাদন্ডের পাশাপাশি তার তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদের মোট ২ হাজার ৩ শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এ সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের নিকটে বন্টেনের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিকে প্রধান ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে অর্থ মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব, সমবায় মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব, পুলিশের ডিআইজি ও চার্টার একাউন্টটিংকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি ডেসটিনির সকল সম্পত্তি সমন্বয় করবে এবং তা এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টন করবেন।
মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ মোট আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অন্য ৩৯ আসামি পলাতক।
অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারি পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক মামলা করেন।
২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।