খুলল স্বপ্নের পায়রা সেতু

স্টার নিউজ ডেস্ক:
বর্তমান সরকার দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেলেও দেশে একটা শ্রেণি রয়েছে, যারা এই উন্নয়ন দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ওই শ্রেণি নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
রোববার (২৪ অক্টোবর) পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত ‘পায়রা সেতু’ উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর উদ্বোধন করেন। তিনি একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এর মাঝেই কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনানো হচ্ছে সেটা আপনারা নিজেরাও টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সাথে প্রচারও চালানো হয়। আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি একটা শ্রেণিই আছে বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত।
এই শ্রেণির লোকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তারা কি তা চান না? একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে। সেজন্য উন্নয়নটা তারা দেখেন না বরং ধ্বংসই সবসময় করতে চান, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
পায়রা সেতুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর সংযোগ সৃষ্টিকারী হবে এ পায়রা সেতু। নদীর নামে একটা সেতু হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। যে কারণে এই নামটাই আমি পছন্দ করেছি। পায়রা শান্তির প্রতীক। কাজেই, এই সেতু হওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের যে আর্থিক উন্নতি হবে তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে এবং মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে তারা ভালোভাবে বাঁচতে পারবে, সেই সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সেতুটির নাম তিনি নিজে পছন্দ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, পায়রা সেতুর মাধ্যমে বরিশাল-পটুয়াখালীর সংযোগ সৃষ্টি হবে। পায়রা নদীর ওপর সেতু। কাজে নদীর নামে সেতুর নামটা হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। সেজন্য এই নামটা আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক, সেতু হওয়ার পর মানুষের যে আর্থিক উন্নতি হবে তার ফলে মানুষের মনে শান্তি আসবে এবং মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সেই সুযোগটা সৃষ্টি হবে।
সশরীরে পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই আপনাদের সঙ্গে গণভবনে বসেও কথা বলতে পারছি, মিলিত হতে পারছি। তবে এটা ঠিক যে আমি যদি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারতাম, পায়রা সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা সেতুতে নেমে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম। যে নদীতে আমি সবসময় স্পিডবোটে চড়েছি সেই নদীর উপরের ব্রিজে যদি হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেখানে যেতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কিন্তু করোনার কারণে আসলে এক প্রকার বন্দি জীবন, সেজন্য আর সেটা হলো না। তবে আমার আকাঙ্খা আছে একদিন গাড়ি চালিয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন এ নতুন সেতুটা দেখতে যাব অবশ্যই।


জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই অঞ্চলের উন্নতি করা একান্তভাবে জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাল-বিল, নদী-নালার দেশ। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যত দ্রতু আমরা করতে পারি। তত এই অঞ্চলের মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে। আর জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখবে। আমরা দেশটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, টুঙ্গিপাড়া থেকে স্পিডবোটে আমি বরগুনা গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রত্যেকটা দ্বীপ অঞ্চল আমি ঘুরি ও জনসভা করি। কাজেই এই অঞ্চলের উন্নতি করা একান্তভাবে জরুরি ছিল। পায়রা সেতু আজ উদ্বোধন হয়ে গেল, এখানে যেমন পর্যটনের সুযোগ হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা আমরা পায়রা পোর্ট তৈরি করছি, এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হবে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য অন্যান্য সেতু করে ফেলছি যেন এই অঞ্চল উন্নত হতে পারে।
তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে শুধু রাস্তাই আমরা করিনি, সেখানে ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ হয়েছে। একটি নৌ-ঘাঁটি হচ্ছে, বিমান ঘাঁটি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোস্ট গার্ডের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ঘাঁটি হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এভাবে পুরো বরিশাল নিয়ে একটি বড় কর্মযজ্ঞ সেখানে চলছে।
চার লেনের এই পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার, প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর উভয় পারে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি খুঁটি বা পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না।
এ ছাড়া এই সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণব্যবস্থা)’ স্থাপন করা হয়েছে। এতে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলে আগেভাগেই সংকেত পাওয়া যাবে।
আধুনিক টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে উভয় পাশের যানবাহনের ওজন পরিমাপের ব্যবস্থা।