
স্টার নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি কখনোই সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং নূন্যতম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংস্কার নয়, নির্বাচন চায়। এ কথা সঠিক নয়। আমরা বারবার বলেছি প্রয়োজনীয় অর্থাৎ নূন্যতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি এবং এখনো বলছি, কারণ যে কোনো একটি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেতে নির্বাচন হলো প্রধান ফটক।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যাটা হলো- এ দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চাই হয়নি। এ সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, আজকে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে তা হলো- ঐক্য, সংস্কার এবং নির্বাচন। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজকে ৫৩ বছর পরে এসে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। খুব ভালো হতো যদি প্রথম থেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে সবাই মিলে কাজ করে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাতে পারতাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আয়নাঘরের কথা সবাই জানেন। এছাড়াও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায়ও আমরা কখনো থেমে থাকিনি। আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার থাকার চেষ্টা করেছি, তখন অনেককেই আমরা সঙ্গে পাইনি। এখন আমরা তাদের সামনে দেখছি, আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি খুবই আন্তরিক এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৬ সালে আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেন। যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা খুব পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা ছিলো এবং এখন যে বিষয়গুলোতে আমরা পরিবর্তনের কথা বলছি সেগুলো ধারাবাহিকভাবে ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যে বিষয়টি একেবারে সামনে চলে এসেছে, সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। এক ব্যক্তি যেনো দু’বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারেন; সে বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে গোলাপবাগে একটি সমাবেশ থেকে প্রথমে ১০ দফা দেওয়া হয়। পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের সামনে পেশ করেছেন। সমস্ত রাজনৈতিক দল সেগুলো সমর্থন করে। দীর্ঘ ২ বছর ধরে বিএনপি এই ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছে।
রাষ্ট্রের সংস্কারের নামে দীর্ঘস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেছিল এবং জরুরি মনে করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে চলে যেতাম, সেটা জনগণ গ্রহণ করতো না বলে আমার কাছে মনে হয়। আমার ধারণা, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। তাই জনগণকে সঙ্গে রেখেই সব কিছু করতে হবে।’ ভুলভ্রান্তি হলেও তা অগ্রাহ্য করে ঐক্য ধরে রাখতে হবে বলেও বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন।
ড. জাহেদ উর রহমানের সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান বিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি’র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
