ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা

স্টার নিউজ ডেস্ক:
ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের পটিয়াসহ সাত উপজেলা এখন নিমজ্জিত। টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর অতিভারি বৃষ্টিতে আশপাশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আরো বিস্তৃতি ঘটেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
চারদিকে পানিবন্দি মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে। আশ্রয়ের খোঁজে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছে মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন শিশু ও বয়স্করা। আটকে পড়াদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
যেখানেই শুকনো ও উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
অভিযোগ ওঠেছে, চন্দনাইশের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেল সড়কটি যেভাবে বিশাল বেড়িবাঁধের মতো উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে তাতে পানি নিষ্কাশনের জন্য দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি নেমে রেললাইনে পানি আটকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়ার কালিয়াইশ, ধর্মপুর, কেউচিয়া ও লোহাগাড়া এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
তবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরী বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, আমরা রেললাইনের প্রতি কিলোমিটারে দুটির বেশি কালভার্ট রেখেছি। এর বাইরে বড় সেতু আছে ৩৯টি। রেললাইনের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, এটা বলা যাবে না। আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পানি ওঠে, এটা নতুন কিছু না। বেশির ভাগ জায়গায় পানি উঠেছে পূর্ব দিকে, আমার রেললাইন তো পশ্চিম দিকে।
প্রথমে তো মহাসড়কে পানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালেও হাশিমপুর বড়পাড়া পাঠানীপুল এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। এ ছাড়াও চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়কগুলো ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়াও দোহাজারী পৌরসভার রায়জোয়ারা, দিয়াকুল, কিল্লাপাড়া, জামিজুরী, পূর্ব দোহাজারী, চন্দনাইশ পৌরসভা, বরকল, বরমা, কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, মাতামুহুরির ঢলে তলিয়ে গেছে চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল। অনেক বাড়িতে তিন থেকে আট ফুট পর্যন্ত পানি ঢুকে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন রেললাইনে পর্যাপ্ত সেতু ও কালভার্ট না করায় সব পানি জমে আছে। বের হতে পারছে না।
অপরদিকে এবারের বন্যার পানি অস্বাভাবিক বেশি। এর সম্ভাব্য কারণ উঁচু করে তৈরি নতুন রেললাইন। এই বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন যেন মারণফাঁদ! বন্যার পানির কারণে গৃহপালিত পশু ও শিশুদের নিয়ে খুব কষ্টে আছে মানুষ। তা ছাড়া বিষাক্ত সাপের উপদ্রব তো আছেই। বেশ কিছু এলাকায় নৌকায় যাতায়াত করতে দেখা গেছে । দোতলায় বা ঘরের চালে মাটির চুলায় রান্না করা, সাঁতরে খাবার পানি আনতে যাওয়া, কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানানো এবং কোনোমতে এই কঠিন সময়টা পার করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন এখানকার মানুষ।