
স্টার নিউজ ডেস্ক:
সচিবালয়ের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ৬ ঘণ্টা জ্বলার পর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে । এর আগে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, ‘বুধবার দিবাগত ভোররাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায় । খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে অর্থাৎ রাত ১ টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার কর্মীরা কাজ শুরু করে। বর্তমানে ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাত ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম । মৃত ফায়ার সার্ভিস কর্মীর নাম মো. সোহানুর জামান নয়ন। তিনি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মো. আক্তারুজ্জামানের ছেলে। সোহানুর তেজগাঁওয়ে স্পেশাল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। এর আগে রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ছয়তলায় আগুনের খবর পাওয়া যায়। পরে দ্রুত সচিবালয়ে থাকা দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে সেখানে ১৮টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নং ভবনে আগুনের ঘটনার পর উদ্ধার সহায়তায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দপ্তর ছিল। এতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আগুনের কারণ সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রনেতা ও সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকার লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। এই আগুন আমাদের ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র হতে পারে। যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাত ২ টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের বিষয় তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইমরান হোসেন স্বাক্ষরিত আজ এক অফিস আদেশে এ কথা জানানো হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি, সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদঘাটন; অগ্নি দুর্ঘটনার পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়-দায়িত্ব আছে কি না তা উদঘাটন এবং এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ প্রেরণ। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও অফিস আদেশে জানানো হয়েছে।
