হাইড্রোলিক হর্ন প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ

স্টার নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা শহরের মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হাইড্রোলিক হর্নের মতো ভয়ঙ্কর শব্দদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব গতকাল মঙ্গলবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক),পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ডিএমপির সকল স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে।
বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় আড়াই কোটি লোকের বসবাস। ঢাকা শহরে শব্দ দূষণ একটি মারত্মক সমস্যা হিসাবে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। বিশেষ করে হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসাবে বিবেচিত। গত প্রায় এক যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে বিভিন্ন আইন প্রনয়ণ থেকে শুরু করে উচ্চ আদলতের সিদ্ধান্তসহ প্রশাসনিকভাবে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করণসহ হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরেনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও ঢাকা শহরে কোনো নিয়ম কানুন অনুসরণ ব্যতিত ব্যাপকভাবে যত্রতত্রহাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার হচ্ছে মর্মে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। বিচারক আদেশে আরো বলেন, শব্দ দূষণ বন্ধের উদ্দেশ্যে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এর ১৮ বিধি মোতাবেক উক্ত বিধিমালায় বর্ণিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করে শব্দদূষণ করলে প্রথম বার অপরাধের জন্য একমাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৪৫ ধারায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত ধারায় মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, নির্ধারিত শব্দ মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ মাত্রার সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটর যানে স্থাপন, পুনঃস্থাপন বা ব্যবহার করতে পারবে না মর্মে উল্লেখ আছে।
এছাড়া উক্ত ধারায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও প্রণীত বিধির অনুসরণের নির্দেশনা আছে। উক্ত ধারা লঙ্ঘন হলে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৮৮ ধারা মতে লংঘনকারী অপরাধ করেছেন মর্মে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। হাইড্রোলিক হর্নের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানের রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২০২১ সালে নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ২০২১ সাল থেকে সরকার বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার বারবার ব্যক্ত করার পরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এর অধীন ঢাকা মহানগরীতে কোন মামলা দায়ের বা বিচারের তথ্য আমাদের জানা নেই। অর্থাৎ কার্যকর আইন থাকার পরও পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব থাকা ঢাকার পুলিশ প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন মর্মে দেখা যায় না।